অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধানে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমা শুরুর আগেই দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত চারজন মুসল্লি নিহত হওয়ার কারণে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে দুই পর্বে তিন ধাপে হচ্ছে এবারের ইজতেমা। প্রথম পর্বের প্রথম ধাপে ৪১ জেলা ও দ্বিতীয় ধাপে ২৩ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন এই ইজতেমায়। প্রথম পর্বের দুই ধাপের আয়োজক শুরায়ে নেজাম বা মাওলানা জুবায়েরপন্থীরা।দ্বিতীয় পর্বের আয়োজক মাওলানা সাদপন্থীরা। আজ ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে প্রথম পর্ব। প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় ধাপ ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি।
দ্বিতীয় পর্ব হবে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি।
আয়োজকদের তথ্য মতে, প্রথম পর্বের দুই ধাপে দুটি আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে শুরায়ে নেজামের আয়োজনে। দ্বিতীয় পর্ব হবে সাদপন্থীদের আয়োজনে। তারা একটি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ৫৮তম ইজতেমা শেষ করবে।তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান কালের কণ্ঠকে জানান, পুরো বাংলাদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে এবং কে কোন ধাপে অংশগ্রহণ করবেন তা এরই মধ্যে জেলাওয়ালাদের জানানো হয়েছে। প্রথম ধাপে অংশগ্রহণকারী জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো হলো গাজীপুর, টঙ্গী, ঢাকার ধামরাই, গাইবান্ধা, মিরপুর, কাকরাইল, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দোহার, ডেমরা, কাকরাইল, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বি.বাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী জেলা। এই ধাপে ঢাকার একাংশসহ মোট ৪১টি জেলা অংশ নেবে।
দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেবে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, মোহাম্মদপুর, মুন্সীগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, নরসিংদী, সাভার, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, নওগাঁ ও বান্দরবান জেলা। এই ধাপে ঢাকার একাংশসহ ২৩টি জেলা অংশ নেবে।শুরায়ে নেজামের আয়োজনে প্রথম পর্বের দুই ধাপে ইজতেমা করার কারণ হিসেবে হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, গত কয়েক বছর শুরায়ে নেজামের অধীনে যেসব ইজতেমা হয়েছে, আমাদের সাথিরা স্থায়ী টয়লেটের ছাদগুলোর ওপরে, আশপাশে ছোট ছোট মাঠগুলোর ভেতরে এবং রাস্তায় ধুলাবালির ভেতর কষ্ট করে অবস্থান করেছেন। এবার দুই ধাপে ইজতেমা হওয়ার কারণে তাঁদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে, ইনশাআল্লাহ। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পুরো ময়দান দেশি-বিদেশি মুসল্লিতে পূর্ণ হয়ে গেছে।
আজ শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার কথা থাকলে ইজতেমার মুরব্বিদের সিদ্ধান্তে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মাধ্যমে এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার বাদ ফজর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। আজ সকাল ১০টায় বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হবে। আজ জুমার সবচেয়ে বড় জামাত পড়াবেন মাওলানা জুবায়ের।
সুষ্ঠুভাবে বয়ান শোনার জন্য পুরো মাঠে শব্দ প্রতিধ্বনি রোধক দুই শতাধিক বিশেষ ছাতা মাইক, ৩০০টি ইউনিসেফ (প্রতিধ্বনি প্রতিরোধক) মাইকসহ পাঁচ শতাধিক মাইক স্থাপন করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের প্রবেশ নিশ্চিতে তুরাগ নদে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা পাঁচটি ও বিআইডব্লিউটিএ একটি ভাসমান (পন্টুন) সেতু নির্মাণ করেছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে যত আয়োজন
পাঁচ স্তরের কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার বাদ ফজর শুরায়ে নেজামের (জুবায়েরপন্থী) আনুষ্ঠানিক বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইন-শৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই দুই পর্বের ইজতেমায় পুলিশ, র্যাব, কিউআরটি, আনসারসহ সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ ছয় হাজার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ১৭টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। এ ছাড়া থাকছে মেটাল ডিটেক্টর, বাইনোকুলার, নাইটভিশন গগলস, পুলিশ ও র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, সোয়াদ টিম, ড্রোন ভিউ, নৌটহল, রুফটপ, হেলিকপ্টার টহল, মুসল্লিদের খিত্তাওয়ারি মোটরসাইকেল টহল।
১৪টি বিশেষ ট্রেন চলবে
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, টঙ্গীতে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে রেলওয়ে থেকে বিভিন্ন রুটে মোট সাত জোড়া (১৪টি) বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ব ইজতেমা চলাকালীন পাঁচটি নন-স্টপ আন্ত নগর ছাড়া সব ট্রেন দুই মিনিট করে যাত্রা বিরতি করবে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে। ইজতেমা উপলক্ষে কয়েকটি ট্রেনের ডে-অফ ও যাত্রা বাতিল করেছে রেলওয়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়।